মোনার্ক ও রুট গ্রুপের হাত ধরে চালু হচ্ছে প্রথম বেসরকারি টিএসপি সার প্লান্ট

ডেইলি শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মোনার্ক ও রুট গ্রুপের হাত ধরে চালু হচ্ছে দেশের প্রথম বেসরকারি টিএসপি সার প্লান্ট। যৌথভাবে গঠন করা গ্রাম বাংলা এনপিকে ফার্টিলাইজার এন্ড এগ্রো ইন্ডষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড দেশের টিএসপি সারের ১২ শতাংশ চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া প্রকল্পটি দেশের সালফিউরিক এসিডের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চ মাসে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন চালু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে SUMEC Complete Equipments and Engineering Co. Ltd. China কর্তৃক বাস্তবায়ন, ডিজাইন এবং ড্রয়িং তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া, ইউরোপ ও চায়না থেকে মূল মেশিনারীজ আমদানি করে চায়না বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী দলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রকল্প যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন, সংযোজনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৩ সালের মার্চ এর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি টিএসপি সার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিড থেকে কোন প্রকার গ্রাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ এর প্রয়োজন হবে না। প্রকল্পের উৎপাদিত বাই প্রডাক্ট বিদ্যুৎ দ্বারা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটির উৎপাদিত পন্য উৎপাদন, বিপনন, সংরক্ষণ এবং পরিবহনের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতিমধ্যে প্রায়োজনীয় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার চরচাষী এলাকায় স্থাপিত এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন মোঃ রাজ্জাকুল হোসেন। কারখানাটিতে প্রধান পণ্য হিসেবে উৎপাদিত হবে : (ক) টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার এবং (খ) এনপিকেএস (মিশ্র) সার।

উপজাত পণ্য (বাইপ্রডাক্ট): (ক) ফসফরিক এসিড, (খ) সালফিউরিক এসিড, (গ) জিপসাম ও (ঘ) বিদ্যুৎ।

বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা: উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণঃ (ক) টিএসপি সার-১,০০,০০০ মেট্রিক টন ও (খ) এনপিকেএস সার-৫০,০০০ মেট্রিক টন।
উপজাত পণ্য (বাই-প্রডাক্ট): (ক) সালফিউরিক এসিড-৩,৩৫,০০০ মেট্রিক টন, (খ) ফসফরিক এসিড -১,১৭,৫০০ মেট্রিক টন, (গ) জিপসাম-১,৫০,০০০ মেট্রিক টন এবং(ঘ) বিদ্যুৎ-৮ মেগাওয়াট।

বাৎসরিক বিক্রয়ের পরিমাণ: প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে প্রায় ৯,০০,০০০ লক্ষ মেট্রিক টন টিএসপি সার বিদেশ থেকে বিএডিসি এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। আমদানিকৃত সার সরকার ভর্তুকি দিয়ে সরকারের অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের মাধ্যে বিক্রয় ও বিতরণ করা হয়।

বিসিআইসি এর আওতাভুক্ত একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান টিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম এর বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৫০,০০০ মেট্রিক টন টিএসপি সার যা দেশের মোট চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। সরকার উক্ত সার ভর্তুকির আওতায় ক্রয় পূর্বক কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত ডিলার দ্বারা কৃষকের নিকট সরবরাহ ও বিতরণ করে থাকে। অবশিষ্ট টিএসপি সারসহ অন্যান্য সার সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ভর্তুকির আওতায় আমদানি করে দেশের কৃষকদের চাহিদা পূরন করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার পিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম হতে ক্রয়কৃত সার এবং বেসরকারীভাবে আমদানিকৃত সারের বিপরীতে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। অর্থ্যাৎ সরকার উভয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে।

সে ক্ষেত্রে কারখানাটিতে উৎপাদিত সারের গুণগত মান আমদানীকৃত টিএসপি সারের তুলনায় সমমান ও উন্নত হলে বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকেও সরকারের ভর্তুকির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে উৎপাদনে যেতে পারলে দেশের কৃষকদের টিএসপি সারের চাহিদা সঠিক সময়ে মেটানোসহ আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। দেশে প্রচুর কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের উৎপাদিত টিএসপি সার এর গুণগত মান আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং সরকার কর্তৃক মানদন্ড বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবো। দেশের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ পুরণ করতে পারবে এই প্রকল্প। এছাড়াও দেশের সালফিউরিক এসিডের সম্পূর্ন চাহিদা পূরন হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে কোম্পানির ব্যস্থাপনা পরিচালক মোঃরাজ্জাকুল হোসেন ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকমকে জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দায় যখন বাংলাদেশও কঠিন সময় অতিবাহিত করছে এ সময় দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছি। আমাদের প্রকল্পটি দেশের টিএসপি সার, মিশ্র সার, সালফিউরিক এসিড, ফসফরিক এসিড,জিপসামের চাহিদা পূরণ করবে। এতে দেশের কৃষি খাতে দারুণ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *